টিউরিং টেস্ট
- আহিরভৈরব
১
তুমি কি মানুষ?
হ্যাঁ, তোমাকেই বলছি—
পিছন ফিরছো কেনো?
তোমাকেই বলছি,
তুমি কি মানুষ?
তুমি, এই তুমি,
বেটেখাটো আঁটোসাঁটো
অপরূপ সুন্দরী,
তোমাকেই বলছি:
তোমার রোয়াওঠা হাতজোড়া
মানুষের হাত, নাকি দানবীর?
কত মানুষ রয়েছে পৃথিবীতে,
তোমারই শান্ত কলেবর,
তুমি, হে তুমি, তুমি ভয়ংকর;
হ্যাঁ, তোমাকেই বলছি:
মানুষ ভয়ংকর, তোমার
হাঁটু— জীবন্ত স্বাক্ষর, তোমার
থুতনি, মৃতাদের স্বাক্ষর—
মানুষ ভয়ংকর, তুমি ভয়ংকর, সুন্দর
শ্বেত আলোর চেয়েও ভয়ংকর:
জ্যেষ্ঠ গ্রীবার স্বাভাবিক শ্লেষ,
ছিন্নভিন্ন মরীচিকার শূন্যস্থানে,
তপন তার স্বাক্ষর— হ্যাঁ তুমিও,
হে তুমিও— তার স্বাক্ষর— মানুষের
পীড়া আর মমতায় বুদ্ধির গুপ্তচর
তোমারই প্রেমের চিহ্নক, চরাচর
২
(আল্যান টিউরিং-র প্রতি)
এক ঘরে তুমি
আর এক ঘরে আমি
আর এক ঘরে সে
আমি প্রশ্ন করি,
"কি রে? সব ঠিকঠাক?"
কালো খামে ভরি
তুমি সুস্থ স্বরে বলো,
"ওই আর কি, চলছে একরকম"
সাদা খামে ভরো
সে আলতো হাতে লেখে,
"ওই আর কি, চলছে একরকম"
সাদা খামে ভরে
তোমার আর তার মধ্যে
পুরুষ বাদেও ব্যবধান রয়েছে বটে
তবে সাদৃশ্য— তোমাদের অনামে,
তোমরা আমি নও
৩
শরীরী বোধ— নিছক
কোমল নয়, কাঠকুটো ও অন্যান্য
কঠিন বস্তুর স্পর্শে উজ্জ্বল হয়েছে—
সিলিকণ, পাষাণ আর পারমাণবিক
বোমার ঘর্ষণ, তার দুলন্ত বহিরবয়ব
ইন্দ্রিয় চিনে গেছে এত দিনে
এত দিনে সমাজতন্ত্র হত হয়েছে,
তাই বলা হয়, "মানুষ হইতে সাবধান,
যন্ত্রই বলীয়ান— বলপ্রয়োগই যেইখানে"
সেইখানে যেন ইন্দ্রিয় পৌঁছায় না আর, সেইখানে
শুধু অনন্তকালীন পুনঃ মুষিক ভব
ঘর্মস্নাত অবুঝ ইঁদুরের মত বদ্ধপরিকর
আমরা বৃক্ষের যান্ত্রিকতা পরখ করলে
আজকে— যান্ত্রিকতার পরিণামে আসবো,
বৃক্ষ হাঁটবে কিছু বছর পর, তখনই বুঝবো
তার ধীর গতির বাজারে কোনো দাম নেই—
যন্ত্র নির্মাণ করব, সবুজ—উৎপাদন করব,
আমরা এতেই নির্মম বদ্ধপরিকর
মনুষ্যত্ব— গবেষণাগারের বাইরে ভাস্কর্য যার
পাশ দিয়ে রোজ বিজ্ঞানীরা হেঁটে যায়
আর ভিতরে প্রয়োজনীয় বস্তুসত্য অনাবৃত হয়,
দিনের আলোছটা থেকে নিঝুম অন্ধকার পর্যন্ত
রঙ পাল্টায়—এ দৃশ্যই ভিতরের
প্রতিবিম্ব, অধরা ক্ষণিকের কথাসত্য
৪
(ফিরাক গোরাখপুরী-র শের অবলম্বনে)
তুমি যে চোখের সামনেও,
তুমি যে মুখের কাছেও
তোমায় দেখবো— না
কথা কবো?
Comments
Post a Comment