The Common Man & The Common Problems

- শতদ্রু


 গোলমতো নাকটার উপরে গোল একটা চশমা, টাক মাথার দুইপাশে একগোছা করে পাকা চুল, পরনে সাদা ধুতি আর checked coat — ভদ্রলোক কখনও হেঁটে যাচ্ছেন কোনো নোংরা বস্তির মধ্যে দিয়ে, পাশ দিয়ে যাওয়া BMW গাড়িটার থেকে ছোঁড়া একটা সিগারেট এসে লাগলো তার গায়ে, কখনো বা বসে আছেন কোনো রাজনৈতিক জমায়েতে, মুখ্য বক্তা সেখানে মুখ ফস্কে এমন কিছু বলে দিয়েছেন যেটা না বললেই ভালো হতো। যার কথা বলছি তার পরিচয় The Times of India-র পাঠকরা জানে The Common Man নামে।

চেহারার বর্ণনা একটু uncommon হলেও ভারতের সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষের প্রতিবিম্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে এই Common Man। ১৯৫১ থেকে The Times of India-র পাতা উল্টালেই দেখা যেত কার্টুনিস্ট R. K. Laxman-এর হাতে আঁকা কার্টুন স্ট্রিপ, সব ছবিতেই নজর কেড়ে নিতো একটু অন্যরকমের দেখতে এই ভদ্রলোক ; ঘটনা যাই ঘটুক গোল গোল চশমার পিছনে বড় বড় চোখদুটো দিয়ে সেই সবকিছু দেখতেন ইনি, আশেপাশের লোকজন কী বলছে তাও শুনতেন মন দিয়ে, কিন্তু কোনোদিন তাঁর নিজের মুখে কোনো কথা তাকে বলতে দেখা যায়নি। R. K. Laxman-এর আঁকার হাত ছিল দক্ষ, দৃঢ় আর নিপুণ ছিল তাঁর তুলির টান, সমস্ত ছবিই ছিল অসামান্য detailed। কার্টুনিস্ট হিসেবে কুট্টি বা আবু আব্রাহামের সমকক্ষ না হলেও রাজনীতির প্রতি তাঁর সচেতনতা আর দৃঢ় sense of humor তাঁর আঁকার মানকে সমৃদ্ধ করে তুলেছিল। ব্রিটিশ কার্টুনিস্ট David Low-এর (যিনি anti-Nazi cartoons আঁকার জন্যে জনপ্রিয়) কাজ থেকে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন Laxman, তবে Low-এর অল্প লাইন আর simplicity-কে নিজের style-এ জায়গা দেননি তিনি। তাঁর পকেট কার্টুনগুলোতে ছিল অপরিমেয় details, নিখুঁত anatomy, আর সর্বোপরি, দেশীয় (অ)রাজনীতির তীব্র ব্যঙ্গ। Times of India-র মতো কাগজের দ্বিতীয় পাতায় জায়গা করে নিতে পারার কারণে খুব সহজেই পৌঁছে যেতে পেরেছিলেন দেশের বিভিন্ন কোণের সাধারণ মানুষের কাছে, আর সাধারণ পাঠকরাও খুব তাড়াতাড়ি ভালোবেসে ফেলেছিল তাঁর Common Man-কে।

Common Man-এর পোশাকের বর্ণনা আগেই দিয়েছি। Fashion বা trend-এর থেকে অনেক দূরের একটা dress code, খুব সাধারণ সস্তা জামাকাপড়, যা ভারতের যে কোন প্রান্তের যে কোনো তলার মানুষের কাছেই গ্রহণযোগ্য। আর সেটাই এই চরিত্রটির মজা — ভারতের কোনো একটা অংশের মানুষকে represent করে না Common Man, বরং দেশের আপাত জনসাধারণের আয়না হয়ে ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকে। হয়তো তার মিল পাওয়া যায় মধ্যবিত্ত জনসাধারণের সাথে ; যারা সবকিছু দেখতে পারে, বুঝতেও পারে, কিন্তু কোনো কথা বলতে পারে না। ভালোমন্দ যাই হয়ে যাক, তারা দাঁড়িয়ে দেখে, নীরবভাবে। গ্যাসের দাম বাড়লে সবার আগে এদের পকেটেই টান পড়ে, দেশের উন্নয়নের খাতে খরচ করতে হলেও এদের পকেটের দিকেই প্রথম নজরটা পড়ে, বেকার সমস্যা বাড়লে এদের ঘরেই বেকারের সংখ্যা বাড়ে, আবার ভোটের সময়ে এদেরকেই বাড়িতে গিয়ে নিমন্ত্রণ করে আসেন হবু নেতামন্ত্রীরা। রাস্তা নতুন ঢালাই হলে এরা কিছুদিন সেখানে হেঁটে সুখ পায় বটে, কিন্তু সেই রাস্তার পাশে বসা হকারদের উচ্ছেদ করে দিলে এদের রোজকার বাজারটাও অসুবিধার মুখে পড়ে যায়। বড়লোকি চাল চেলে shopping mall থেকে আলু-পেঁয়াজ কেনার ক্ষমতা এদের নেই — মাসের শুরুতে একদিন রেস্টুরেন্টে খেতে গেলেও মাসের শেষে সেই আলুসেদ্ধ-ভাতই খেতে হয়। আলুসেদ্ধ করতে গেলে যে আলুটা কিনতে হবে সেটাও কিনতে গায়ে লাগে তখন। তাই ভালোগুলো এদেরকে আর affect করে না, কারণ যত ভালো ঢালাই হোক না কেন, মাস ঘুরতে না ঘুরতেই সেখানে আবার কিছু গর্ত আর গাড্ডা উঁকি দেবেই। আর এই মধ্যবিত্তের ভিড় থেকেই উঁকি মারে গোল চশমার ফ্রেমের মধ্যে থেকে কৌতূহলী দুটো চোখ, ভুক্তভোগী Common Man দেখে, কীভাবে উচ্চপদস্থ সরকারী চাকুরে বাবু, যিনি এই আগের সপ্তাহেই ফ্যামিলি নিয়ে পাঁচতলা রেস্টুরেন্টে গিয়ে মাটন বিরিয়ানি খেয়ে এসে status দিচ্ছিলেন, এখন ৩০ টাকা কিলোর আলুটা ২০ টাকায় নেওয়ার জন্যে উঠেপড়ে লেগেছেন।

প্রচণ্ড মধ্যবিত্ত এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমরা দেখতে পাই কখনো নেতামন্ত্রীদের, কখনো ফুটপাথে বসা ভিখারীদের। Laxman-এর কার্টুন সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সমস্ত চরেই বিচরণ করে। কখনও তাতে ফুটে ওঠে টিভিপর্দার পিছনের অপ্রিয় রাজনৈতিক সত্যিগুলো, কখনো উঠে আসে দারিদ্র আর বেকারত্বের খুব পরিচিত কিন্তু অপ্রিয় ছবি, তিক্ত ব্যঙ্গের মুখে পড়ে শিক্ষাব্যবস্থা থেকে সংশোধানাগার। সরস caricature আর সহজ dialogue-এ কখনো কখনো আবার ফুটে ওঠে অত্যন্ত মানবিক কিছু appeal-ও। একটা ছবিতে দেখা যায় গুজরাটে বন্যায় বিদ্ধস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে Common Man, তার হাতে নিজের জমানো কিছু খুচরো পয়সা তুলে দিচ্ছে এক ভিখারী। সঙ্গে caption, “..at a time like this, nothing is too small…”।



যেমনটা আগেই বললাম, Common Man খুব সাধারণ, খুব ordinary একজন, অন্যদের থেকে একেবারেই আলাদা কেউ নয়। তার স্বাভাবিক ভঙ্গি আর আচরণ, কিংবা পরিধানের ধুতি, সবকিছুর মধ্যে দিয়েই ফুটে ওঠে তার সহজ, সরল ও down-to-earth, humble চরিত্র। কোনো আমলামার্কা লোক নয়, কোন ঠাটবাট নেই, নিতান্ত সাধারণ এই মানুষটির অস্তিত্ব সমালোচনা করে ‘উচ্চশ্রেণী’কে, তাদের elitism-কে। বারবার Laxman-এর আঁকা strip-গুলোতে ঘুরেফিরে আসে উচ্চশ্রেণীর লোকজন — সমাজের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি, মতামত, বা বক্তব্য, এগুলো তাদের স্বার্থসিদ্ধিতে কাজে লাগলেও সমাজ বা সমাজের সাধারণ মানুষ, তাদের কোনো উপকারেই লাগে না। এরা নিজেরাই নিজেদেরকে ভালো বলে, নিজেরাই নিজেদেরকে খারাপ বলে, নিজেরাই নিজেদের ভালো, বা খারাপ করতে চায়, বাকিদের নিয়ে এদের আসলে কোন মাথাব্যাথা থাকে না, কিন্তু তাও ডাক্তারকে বলে প্রেসক্রিপশনে একটা মাথাধরার ওষুধ লিখিয়ে রাখে।

The Common Man embodies the idea of democracy and egalitarianism (সমতাবাদ/সমানাধিকারবাদ). সমাজের আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের সাথে তাদের মতো করেই এও সাধারণের দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা এবং চাহিদাগুলোর মুখোমুখি হয়। সামাজিক বা রাজনৈতিক তর্কের গভীর কচকচিতে যাওয়ার দরকার নেই, আমাদের চোখের সামনে রোজ কতকিছু ঘটছে… এই যে গড়িয়া থেকে গোলপার্কের অটোগুলো মাঝে মাঝে যাদবপুর থানার পরে যেতে চায় না, বজবজের ট্রেনগুলো দেরী করে ঢোকে বলে বালিগঞ্জ থেকে down লাইনের ট্রেনগুলোও ছাড়তে দেরী করে, এই যে একটু বৃষ্টি হলেই কলকাতা শহর আটলান্টিস হয়ে যায়, কিংবা উন্নয়নের নাম করে heritage ঘরবাড়িগুলোকে ধ্বসিয়ে দেওয়া হয়, কিংবা জুলাই মাসের একটি বিশেষ দিনে পার্ক স্ট্রীট থেকে যে রাস্তাটা Fort Williams-এর দিকে যায় (সম্ভবত কলকাতার সবথেকে পরিষ্কার রাস্তা), সেই রাস্তায় ভর্তি হয়ে পড়ে থাকে এঁটো কাগজের প্লেট। মানে এগুলো তো ভারত-পাকিস্তানের সিঁদুরখেলা বা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো বড় ব্যাপার না, কিন্তু সাধারণ মানুষের সাধারণ সমস্যা, এগুলো নিয়েই কথা বলে Laxman-এর কার্টুন স্ট্রিপ। যদি আজ Laxman বেঁচে থাকতেন তবে হয়তো Common Man-কে দেখতে পেতাম 14th August-এর রাতে, 8B বা গড়িয়াহাটের মোড়ে, অগুনতি মানুষের সঙ্গে রাত জেগে বসে থাকতে, দেখতে পেতাম কোনো এক ধিক্কার মিছিলে, সাধারণের সঙ্গে একইসাথে হেঁটে যেতে।

আচ্ছা তাহলে কি Common Man রাজনৈতিক? জানিনা, হয়তো তাই। আসলে রাজনীতি মানে তো শুধু কে ভোটে জিতলো, কে মঞ্চে উঠে কাকে গালিগালাজ করলো তা নয়, রাজনীতি আমাদেরকে জড়িয়ে ধরে আছে। আমরা যদি বলি, আমি রাজনীতির অংশ নই আমি এইসব নিয়ে মাথা ঘামাই না, সে ঘামাই না ঠিকই, কিন্তু as long as we are part of a society, and as long as we pay taxes, we are indeed a part of the democracy, রাজনীতির অংশ না হয়ে আমরা যাই না। যদি বোবাকালা সেজে না থাকি, তবে আমরা চোখের সামনে রোজ যা দেখি, যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হই, সেগুলো সবই আপাতভাবে রাজনৈতিক। আমরা, এই মধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষ, আমরা একটু intellectual, কিন্তু আমাদের রোজগার নির্ভর করে দৈনিক পরিশ্রমের উপরে, যখন একসঙ্গে হয়ে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করি, তখন কিছুটা পরিবর্তন আসবো আসবো করে, সত্যিকারে আসতে একটু সময় লাগে যদিও। আমাদের সত্যি কোনো ক্ষমতা নেই, আমাদের হাতে কোনো জাদুকাঠিও নেই, কিন্তু আমাদের অনেক সমস্যা আছে, সমস্যাগুলোর সমাধান আছে, আর আছে বদলে দেওয়ার চেষ্টা। আমরাই ভোট দিই, আমরাই মিছিল করি, কারণ আমরা সকলেই একেকজন Common Man। আর Laxman-এর The Common Man, সে তো আমাদের আয়না মাত্র।

২০১৫-তে ৯৪ বছর বয়সে মারা যান R. K. Laxman, বন্ধ হয়ে যায় Times of India-র “You Said It” নামের daily cartoon strip টাও, যেখানে প্রত্যেকদিন Common Man-কে দেখা যেত, খুব common problem-গুলোর ঠেলায় নাজেহাল অবস্থায়। R. K. Laxman-এর আঁকা strip বন্ধ হয়ে গেলেও Common Man বেঁচে থাকবে, যতদিন ভারতের সাধারণ মানুষ আর তাদের খুব সাধারণ সমস্যাগুলো বেঁচে থাকবে।









All cartoons are courtesy of The Times of India Group and we don't own any these cartoons. Copyrights reserved by Bennett, Coleman and Co Ltd.


Comments