বদ্ধ আকাশ

- শ্রেয়সী


কখনও সেই আকাশটা দেখেছেন? বিষাদগ্রস্ত আকাশ? বা বৃষ্টি হওয়ার আগে একটা চাপা কষ্ট, গুমোট করা বদ্ধ আকাশ? 

চাপ অনেক প্রকার! 

মানসিক চাপ তার মধ্যেই খুব চেনা আমাদের সবার কাছেই .. যদিও এই বিষয়ে বয়সের ছাপ খুব একটা যে প্রভাব ফেলে সেটা নিয়ে এক মত না হতে পারলেও ; ইদানিং একে বারে বিমতে যেতেও পারি না ।। বর্তমানে দাঁড়িয়ে যদি একজন individual হিসেবে না ভেবে ; চিন্তাধারাটা একটু বদলে বাস্তবটাকে যদি একটা তরতাজা দৃষ্টিতে দেখা যায়? 

তাহলে হয়তো দেখা যাবে , সবাই সবার মত করেই মানসিক চাপ নিয়েই জীবনে বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করে যাচ্ছে .. বিজ্ঞান একে anxiety, frustration আবার depression, অনেক নামই দিয়েছে।

তবে আজকের বিষয়টা সবাইকে নিয়ে নয়!

আজকের বিষয়টা শুধু তাদের নিয়ে; 

যাদের হাতে ভবিষ্যতের এই গোটা সমাজ টা থাকার কথা .. 

যাদের হয়তো সীমা বোধের বাইরে থাকার কথা ... 

আজকের গল্প টা সীমার... 


সীমা রায় ।

উত্তর পাড়া আনন্দ হাই স্কুল এর একজন একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী... 

বাবা মার আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকায় মেয়েকে নাম করা স্কুলে ভর্তি করতে পারেননি ..

মেয়েটির আফসোস নেই কিছুতেই।

নাকি বলা উচিত, ছিল না ? 

সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে সীমা... 

সে জানে না বাইরের জগতের চলন রীতি; আঁকড়ে ধরে বেড়ে উঠছে সে নিজের বাবা, মা, আর বড়ো হয়ে লেখিকা হওয়ার স্বপ্নকে ।

লেখিকা হতে চায় সে, লিখতে চায় পাতার পর পাতা; তার নিজের গল্প, তার বেড়ে ওঠার গল্প আর হয়তো এই সমাজের গল্প?

মেয়েটির মেধা অতুলনীয়। বাংলা ভাষায় তার দক্ষতা যেন তার বয়সি সব ছেলে মেয়েদের হার মানায়। ইংরিজি ভাষাতেও কথা বলে সে কোনো বাধা ছাড়া, তার হাতের লেখায় যেন মৌন মুখে কথা ফোটে স্বপ্নের মতো। 

কিন্তু ইদানিং কালে তার হাতে আর নতুন লেখার জন্ম হয় না! 

প্রশ্ন ওঠে নিশ্চয়ই, 

"কেন?"


সীমা এখন তথাকথিত সমাজের সেরকম একজন ব্যাক্তি,  যারা তথাকথিত সমাজের কিছু বেঁধে রাখা নিয়মের বাইরে পা ফেলতে পারে না!

সে আর নতুন কিছু চিন্তা করতে পারে না! 

চোখে ঘুম আসলে কেবল ঘুমোতে পারে সে;

সে আর স্বপ্ন দেখতে পারে না!! 

 সীমা তারপর আর কখনও লেখিকা হয়ে উঠতে পেরেছিল কিনা জানি না... কিন্তু গল্পটা যে শুধু মাত্র সীমার নয় সেটা জানি! 

এরকম কত স্বপ্ন যে পূরণ হয় না তার হিসেব কি কেউ রাখে? 

কত কত নতুন স্বপ্ন, নতুন গল্প, নতুন মুখ হারিয়ে যায়; তাদের হিসেব রাখে ক'জন ? তারা হারিয়ে যায় শুধু মাত্র কি কথা বলতে পারে না বলে ? 

আচ্ছা! তারা কথা বলতে চাইলে তাদের কথা শুনতে আসে ক'জন ? 

তথাকথিত সমাজ যাকে Standard হিসেবে ঘোষিত করেছে, সেই Standard-এ পৌঁছতে ঠিক কত মাইল খালি পায়ে দৌড়াতে হয়ে ? 

কত মস্তিষ্কে আগুন ধরালে পৌঁছানো যায় সেই স্তরে ? 

মস্তিষ্কে আগুন যদিও বা সমাজ-ই দেয়...

কী ভাবে? 

লেখা শুরু করেছিলাম যে শব্দ দিয়ে! 

"চাপ"

"মানসিক চাপ"।।

Comments