কোল্যাটেরাল ড্যামেজ?
- ঋত চক্রবর্তী, একাদশ শ্রেণী
"এ পরবাসে রবে কে হায়,
কে রবে এ সন্ত্রাসে সন্তাপে শোকে.."
আবার অন্য এক শতাব্দীতে অন্য 'কারণে' একই গল্পের ভিন্ন ভাবে পুনরাবৃত্তি করে চলে ভিন্ন চরিত্রেরা । অন্তহীন এই পুনরাবৃত্তি।। ওপরওয়ালার কর্তাদের মনোমালিন্য হলে তারা হুকুম দেন যুদ্ধের - এবং লাখো লাখো লোক শুরু করে তৈয়ারি। গোলা বারুদ বোমা ও শত শত মারণাস্ত্র দিয়ে আয়োজন হয় মানুষ মারার।
ওপরওয়ালারা খোঁজ রাখেন বর্ণ জাতি বা ধর্ম কেন্দ্রিক মানুষে মানুষে বিদ্বেষের । লালন করেন মানুষে মানুষে তৈরী হওয়া বিষ। এবং সময় বুঝে বারুদের পিপেতে আগুন ধরিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটে যায় একটা বিরাট যুদ্ধ। ক্ষমাহীন। মানেহীন। মানুষের খুন দিয়ে রচনা করা হয় এক প্রতিবিধানের গল্প। "We have been wronged"এর ন্যারেটিভ সমানে গিলে চলা একদল প্রতিশোধ চেয়ে ক্রোধে আক্রোশে ফেটে পড়ে। প্রতিশোধ ঘৃণ্য। প্রতিশোধ শেখায় রক্তে উল্লসিত হতে।আর সেই প্রতিশোধের ফের প্রতিশোধ চেয়ে হিংস্র আবর্তে ঘুরে মরে নিজেরা আর ঘুলিয়ে মারে জগৎটাকে।
এত কিছু ঘটে যায়, ওপর ওয়ালারা কেমন থাকেন? ভালোই। কারণ ঝোল বেশি গড়ালে তারা যে হাত মিলিয়ে নেবেন। তারা ভাবেন না কত মানুষ মরল। তারা বোধহয় মনে করেন না মানুষের বাঁচার অধিকার বলে কিছু আছে। অথবা প্রবল বিস্ফোরণে গলে যাওয়া দেহ। বুলেটে ঝাঁঝরা শব, আনবিক বিস্ফোরণের ফলে অম্ল বৃষ্টিতে পচে যাওয়া মাংসের দুর্গন্ধ , মাছি, মন্বন্তর - তাদের উল্লাস এনে দেয় হয়তো বা। আর এই মানুষের হাড়ের তৈরি ঘুঁটিতে পাশবিক পাশার খেলায় - উজাড় হয়ে যায় উলুখহাগড়ারা। সেই উজাড় হয়ে যাওয়ার একটা নাম দিয়েছেন পন্ডিতেরা। দুটি মাত্র শব্দ। সমান্তরাল ক্ষতি। collateral damage। হ্যাঁ ঠিক শুনেছেন। দুটি মাত্র শব্দ। আকাশ কাঁপানো বিস্ফোরণে ধুলিস্যাৎ হয়ে গেল গোটা একটা শহর। একটা গোটা শহর। কত প্রাণ থাকে একটা গোটা শহরে? শহরটা জীবন্ত ছিল। হাজার হাজার মানুষ জীবনযাপন করছিলেন প্রতিদিন। হাসছিল - কাঁদছিল - গান গাইছিল - স্বপ্ন দেখছিল আগামীর। জন্ম হচ্ছিল নবজাতকের। শহরটা বেঁচে ছিল।- তারা সবাই collateral damage। বিস্ফোরণে উজাড় হয়ে যাওয়া মানুষ ছাড়াও ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে থাকা শত শত বিকলাঙ্গ মানুষের ধংস ভবিষ্যত- collateral damage। কোনভাবে বেঁচে থাকা দগদগে ঘা নিয়ে কাঁটাতার পেরিয়ে যাওয়া মানুষ - collateral damage। hospital এর ধ্বংসস্তুপের মধ্যে একটি শিশুর ছেঁড়া হাত পা -
collateral damage।
যারা যুদ্ধ চায় তারা যুদ্ধ দেখেনি।
প্রতিবাদ ক্ষণস্থায়ী। প্রতিরোধ ক্ষণস্থায়ী। আজ বাদে কাল মানুষ ভুলে যাবে। তাই আর বিপ্লব করেই ওঠা হয়ে উঠল না কখনো। দোষ দেওয়াই যখন দস্তুর তখন তাই হোক। প্রতিবিধান প্রতিশোধ চেয়ে মারণ খেলায় খান খান করে দিক আগামী। আর আমরা বরং চোখ বুজে কানে হাত চেপে কোনমতে থেকে যাই। জীবন্ত শব হয়ে।
যতদিন না ঘরের ঠিক সামনে বোমাটা পড়ছে।
Comments
Post a Comment