গালাগালির মা-বাপ নেই

ছোটবেলা থেকে চারপাশের পরিবেশে গালাগালি শুনিনি বললেই চলে। যেটুকু শোনা রাস্তায় চলতে চলতেকোনও এক খেটে খাওয়া মানুষ আরেক খেটে খাওয়া মানুষের ওপর রেগে গিয়ে তেড়ে গালাগালি দেওয়া শুনে। তখন বোঝার মত বয়েসও ছিল নানা ছিল তা বিচার করার মত মন। তারপর একটু যখন বড় হলামমা-বাবাই পরিচয় করিয়ে দিল গালাগালি কীতার মানে কী... এইসব আর কি। তখন সেগুলোকে খুব কদর্য মনে হয়েছিল। তখন লকডাউন চলছিল, 'স্কুলনামক বস্তুটির সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। তারপর স্কুল খুললবন্ধুদের মুখে মুখে সেই 'কদর্যতাছড়িয়ে পড়তে দেখলাম। মনে হলআমারও তবে গালাগালি দেওয়া উচিত... কেন এমন মনে হয়েছিল জানি না। তবে একটা জিনিস অবচেতনে কাজ করছিলছোটবেলায় শোনা একটা কথা। বাবাকে একবার বলতে শুনেছিলাম-

"খেয়াল করে দেখলে দেখবিগালাগালির চরিত্র বড় মেয়েঘেঁষা..." 

 যাকে বলেছিলসে জিজ্ঞেস করেছিল, "মানে?"

"মা-বোনকে তুলে দেওয়া গালাগালির কথা বাদ দিলেসবচেয়ে সাধারণ গালাগালি 'শালাআসলে তো বউয়ের ভাইকিন্তু শুধু বউয়ের ভাই কেন গালাগালি হবেকই দেওর তো গালাগালি নয়?"

শুনে কথাটা মনে রেখেছিলাম। পরবর্তীকালে গালাগালি শুনে কথাটা সত্যি মনে হয়েছিল। Sexism কাকে বলে তা জানার পর বুঝতে পেরেছিলাম গালাগালির মধ্যে সেটি অত্যন্ত প্রকটএবং স্কুলভাবে প্রকট। মা-বোন তুলে গালাগালি তো আছেইতার মধ্যে অন্তর্গত হিংসা-দ্বেষ আরও বেশি প্রকট। তাইযদি ফিরে আসা যায় এই লেখার নামে, "গালাগালির মা-বাপ নেই”তা অত্যন্ত ভুল। গালাগালি শুধু মেয়েঘেঁষাই হয়... কেউ কোনওদিন বাবা তুলে গালাগালি দেয়নি। এই যে বলা হয় "শুয়োরের বাচ্চা", "কুকুরের বাচ্চা"- ধরে নেওয়া যাক এক্ষেত্রে বাবা-মা দু'জনকেই অপমান করা হচ্ছেকিন্তু বাচ্চাকে জন্ম দেন যিনিঅর্থাৎ মাতার ওপর যেন অপমানের ভারটা বেশি। গালাগালি যারা দেনতারা হয়তো এত ভেবে দেন নাভেবে দেওয়ার কথাও নয়কিন্তু দেওয়ার সময় বেছে বেছে gender-neutral গালাগালি আমরা তথাকথিত "শিক্ষিতমানুষেরা দিতেই পারি। শেষ কথা হিসেবে বলবগালাগালির যাতে সত্যিই মা-বাপ না থাকেগালাগালির মধ্যে যেন মেয়েঘেঁষা ব্যাপার না থাকেগালাগালির মধ্যে যাতে আমাদের মনের কদর্য দিকটা প্রকট না হয়ে ওঠেতা সম্ভব করার সবচেয়ে সহজ উপায় গালগালি না দেওয়া। অত্যন্ত সহজ প্রতিকার এতবড় একটা সমস্যার।



-অদ্বিতীয়া আকাশলীনা, দশম শ্রেণী

Comments