তুমি চোখ মেলো—
আলো আর অন্ধকারের সংযোগস্থলে দাঁড়িয়ে থাকে
একটি সমাজ, একটি সংসার,
একটি শৃঙ্খল—অদৃশ্য, অথচ দৃঢ়।
শুরুটা কোথায়?
একটি কন্যার জন্মের সাথে—
তার ছোট্ট হাতে বাঁধা হয় গোলাপি ফিতের গিঁট,
তার পায়ের নিচে মাটির বদলে বিছিয়ে দেওয়া হয়
নরম তুলোর আস্তরণ।
"মেয়ে মানুষ এভাবে হাঁটে না!"
প্রথম শাসনের রেখা টেনে দেয় পিতৃতন্ত্র।
তারপর একে একে গড়ে ওঠে—
শালীনতার সংজ্ঞা, ভাষার সীমা,
হাসির পরিধি, ইচ্ছের সংযম।
তারপর সে বড় হয়।
তার বইয়ের পাতায় লেখা থাকে—
"নারী স্বাধীন, নারী শক্তি!"
কিন্তু ক্লাসরুমের কোণায় কেউ ফিসফিসিয়ে বলে—
"বেশি উঁচুতে উঠতে গেলে
আকাশ ফুঁড়ে যেতে হয়,
সেটা মেয়েদের মানায় না!"
তারপর সে প্রবেশ করে কর্মক্ষেত্রে,
প্রতিটি বৈঠকে তার কণ্ঠস্বর
এক সেকেন্ড দেরিতে শোনা যায়।
তার যোগ্যতা তার শরীরের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে,
তার চোখের ভাষা তার পোশাকের দৈর্ঘ্যে মাপা হয়।
তার অগ্রগতি তার সহকর্মীদের ঠোঁটে
একটি হাস্যরস হয়ে ওঠে—
"প্রমোশন পেল? নিশ্চয়ই কারও বিশেষ প্রিয়!"
তারপর সে ফিরে আসে ঘরে—
হাতের কাঁপুনিতে চায়ের কাপ তোলে,
রান্নার ধোঁয়ায় স্বপ্নের ছাই মেশে,
শিশুর কান্নার ফাঁকে প্রশ্ন জাগে—
"আমি কি সত্যিই কিছু হারালাম?"
অপর পাশে বসে দীপক খবরের কাগজে মুখ গুঁজে থাকে,
নীলা পাশের ঘরে চুপচাপ কান্না গিলে নেয়,
অনি বলে, "মা, তুমি কি বাবার থেকে কম?"
তুমি চোখ বন্ধ করো—
দেখবে, এই সমাজ
একটি দেয়াল,
একটি ছায়া,
একটি শিকল।
আর তার ওপারে দাঁড়িয়ে আছে
একটি কন্যা,
একটি প্রশ্ন,
একটি বিদ্রোহ।
- অমৃতা মুখার্জি (প্রথম বর্ষ)
সৌমিল মুখার্জি (প্রথম বর্ষ)
Comments
Post a Comment